২১ শে ফেব্রুয়ারী ছুটিকে পুঁজি করে ঢাকার গাবতলিতে টিকিট বাণিজ্য, ৪০ সিটের বিপরীতে বিক্রি ৭২, ভাড়া ৬শ, দেখার কেউ নেই

সুমন মালাকার, কোটচাঁদপুরঃ
শহীদ দিবস ও সাপ্তাহিক সরকারি ছুটিকে পুঁজি করে ঢাকার গাবতলি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের কর্তৃপক্ষ সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে নির্ধারিত মূল্যের দেড়গুন থেকে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করেছে। গত মঙ্গলবার মালিক সমিতির পরিচালিত বিভিন্ন স্তরের কাউন্টার দালাল ও কলার ম্যানদের সমন্বিত ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২১ ফেব্রুয়ারী ছিল সরকারি ছুটি দিন। একদিন পর শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে সরকারি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অনেক পোষাক শিল্পের কর্মীরা স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতে বিভিন্ন বাস কাউন্টারে আসেন। আকষ্মিকভাবে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কাউন্টারের কাউন্টারম্যান, দালাল ও কলারম্যান কৃত্রিম টিকিট সংকট সৃষ্টি করে। উপায়ান্তর না পেয়ে ঘরমুখো যাত্রীরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুন দামে টিকিট কিনেছেন। কাউন্টারের সহায়তায় কলারম্যান ও দালালরা বাসের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে যাত্রীদের কাছে প্রচার করতে থাকে। এক পর্যায়ে নিরুপায় যাত্রীরা তাদেরকে তোষামদ ও অনুরোধ করলেও বাড়তি টাকা গুনেই টিকিট নিতে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাবতলি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলিতে ছেড়ে আসা কিছু উল্লেখযোগ্য হাতেগোনা পরিবহন বাদে বাকীগুলোতে এমনটি ঘটেছে। আবার একই সিট দু’বারও বিক্রি করা হয়েছে। ঢাকা-দর্শনা রুটের চিত্রা, উত্তরা, কোহিনূর, মামুন, সোনালী, ইউনিক পরিবহনে ছিল একই চিত্র।
অন্যদিকে সাতক্ষিরা, খুলনা, পাইকগাছা, বরিশাল, পটুয়াখালি রুটেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দর্শনা রুটে চেয়ার কোচের ভাড়া ৪’শ ৫০ টাকা। সাধারণ পরিবহনে ৩’শ টাকা। অথচ যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫’শ ৫০ থেকে ৬’শ টাকা। যাত্রীদের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করলেও কোন ফল মেলেনি। গাবতলি থেকে রাত ৯.৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসা চিত্রা (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-১০৭০) পরিবহনে ৪০ সিটের স্থলে ৭২ জন যাত্রী নেওয়া হয়েছে। গাবতলি থেকে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে ছাড়ার পর নবীনগরে এসে যাত্রী হয় ৭২ জন। বাসটিতে অধিকাংশই ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী। তাদের সাথে থাকা নারী-শিশু, বৃদ্ধদের সীমাহিন দূর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মত। হামিম গার্মেন্টসে চাকুরীরত কর্মী শাকিলা ও ছাদ্দাম নবীনগর থেকে ১২’শ টাকা দিয়ে ই-৩,৪ টিকিট কাটেন। বাসে উঠার পর তিনি ও তার স্ত্রী কোন সিট পাননি। গাবতলি থেকেই আগেভাগেই অন্য যাত্রীদের কাছে এ সিট বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অবশেষে প্রায় ২’শ ৩০ কিলোমিটার পথ দাড়িয়ে থেকেই তাদের যাত্রা শেষ করতে হয়। শাকিলার জন্য তার স্বামী বার বার একটি টুলের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলেও কর্তৃপক্ষ তা করেনি। ছাদ্দাম ও শাকিলার মত কমপক্ষে আরোও ২৫ জন যাত্রীকে দাড়িয়ে থেকেই ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যাত্রীরা বাসের ড্রাইভার ও সুপারভাইজারদের সাথে কথা বললে তারা সাফ জানান, আমাদের কিছুই করার নেই। এ ব্যাপারে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। যাত্রী পরিবহনের নামে সাধারণ মানুষের সাথে অমানবিক আচারণ করলেও দেখার কেউ ছিল না বলে আভিযোগ পাওয়া যায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment